ধর্ম ডেস্ক : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি যাবতীয় প্রশংসায় প্রশংসিত এবং সব ধরনের মহত্তর গুণে গুণান্বিত। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি তার বান্দাদের প্রিয় বস্তুর দিক রাস্তা দেখান এবং প্রিয় বস্তু-গুলোকে বান্দার জন্য সহজ করেন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক বিশেষভাবে বাছাইকৃত রাসূলের উপর যিনি আমানতদার। আর আমার প্রভুর সালাত ও সালাম কিয়ামত অবধি সব সময় বর্ষিত হোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। আমীন।
অতঃপর, যে সব আমল আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে অধিক পছন্দ করেন এবং অধিক খুশি হন, আল্লাহর গোলামীকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে একজন বান্দা সে আমলগুলি করতে, যে চেষ্টা ও পরিশ্রম করে তারই ভিত্তিতে আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বত পূর্ণতা লাভ করে এবং বান্দার প্রতি তার রবের মহব্বত বাস্তব রূপ নেয়।
বিষয়টি যেহেতু এমনই, তাহলে একজন বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা যে সব আমল পছন্দ করেন এবং যে সব আমলে তিনি অধিক খুশি হন, তা জানতে হবে। তারপর তাকে অবশ্যই সে আমলগুলো জানার পর তদনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করতে হবে ও সেটা বাস্তবায়ণ ও সার্বক্ষনিক সেটার অনুগামী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর আল্লাহর দরবারে সেসব আমল করার তাওফিক চাইতে হবে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করতেন: “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট তোমার মহব্বত কামনা করি, তোমাকে যে মহব্বত করে, তার মহব্বত কামনা করি এবং যে আমল তোমার মহব্বত পর্যন্ত পৌছায়, সে আমল কামনা করি। হে আল্লাহ! তোমার মহব্বতকে আমার নিকট আমার জান-মাল, পরিবার-পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানি হতে অধিক প্রিয় করে দাও।” [1]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার অনুগ্রহ ও হিকমত হল, যে অভীষ্ট লক্ষ্যকে তিনি বান্দার জন্য পছন্দ করেন এবং মহব্বত করেন, তা হাসিল করার জন্যে আল্লাহ্ তা‘আলা এমন একটি মাধ্যম নির্ধারণ করেন, যার দ্বারা বান্দা তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার সবচেয়ে মহান উদ্দেশ্য ও সর্বোত্তম লক্ষ্য- আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তার সন্তুষ্টি অর্জন তা- হাসিলের জন্য কিছু মাধ্যম ও উপকরণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে, আল্লাহর উপর ঈমান এবং সৎ আমল করা; যা আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য শরী‘আত হিসেবে প্রদান করেছেন এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন। এমনকি ইসলাম ইসলাম, তার যাবতীয় আকীদা ও বিধান সবই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যকে বাস্তবায়িত করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তার নৈকট্যের অনসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫]
আল্লাহর বাণী: وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَএর অর্থ হল, তোমরা নেক আমল তালাশ কর, যাতে তা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পার। আর তা হচ্ছে, যাবতীয় নেক আমলসমূহ, যা দ্বারা একজন বান্দা তার রবের নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, মহব্বত ও কাছে থাকার সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়।
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, ইসলামী শরিয়তে যত প্রকার নেক আমলের কথা বলা হয়েছে, সব নেক আমলের ফযিলত ও মর্যাদা এক নয় এবং সমান নয়। যদিও সমস্ত নেক আমলের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, আল্লাহ তা পছন্দ করেন এবং তাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট ও খুশি হন, কিন্তু আল্লাহর নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয় হওয়ার বিবেচনায় আমলসমূহের মধ্যে পার্থক্য আছে এবং আমলসমূহের বিভিন্ন স্তর আছে। একটি আমল অপর আমলের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া বা আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় হওয়া স্বাভাবিক। এ কারণে দেখা যায়, কোন আমল অধিক উত্তম আবার কোন আমল কম উত্তম আবার কোন আমল শুধু উত্তম। আমলের স্তর ও মর্যাদা অসংখ্য ও অগণিত।
আর মানুষও এ সব আমলে প্রবিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের হয়। প্রত্যেকেই প্রথমত আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃক তার প্রতি প্রদত্ত তাওফীক অনুসারে, তারপর আল্লাহর নাম, সিফাত ও কর্মসমূহ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে তারতম্যের ভিত্তিতে, তারপর শরী‘আত অনুমোদিত নেক আমলসমূহের ফযীলত, সেগুলোর বৈধ সময়, ও অবৈধ সময় সম্পর্কে জানার পার্থক্যের ভিত্তিতে তা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কারণ, একই নেক আমল শুধুমাত্র আমল হিসেবে কখনও কখনও আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে থাকে; তখন আল্লাহর নিকট সেটি অন্য আমলের তুলনায় বড় হিসেবে গণ্য হয়, আর সে জন্য আল্লাহ সেটাকে অধিক ভালোবাসেন। যেমন, ঈমান, সালাত ইত্যাদি নেক আমলসমূহ। অনুরূপভাবে সময়ের কারণেও অনেক সময় নেক আমলসমূহের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে তুলনামূলক কম ফজিলতপূর্ণ আমল তার বৈধ সময়ে আদায় করাতে আমলটির সাওয়াব অধিক ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হয়ে থাকে, ঐ সময়ে তুলনামূলক অধিক ফজিলত-পূর্ণ আমলসমূহ আদায় করার তুলনায়। যেমন, আযানের সময় কুরআন তিলাওয়াত করার তুলনায় মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা অধিক উত্তম। অথচ সাধারণত কুরআন তিলাওয়াত করা সামগ্রিক দিক বিবেচনায় সর্বোত্তম যিকির।
আবার অনেক সময় আল্লাহ্ তা‘আলা কোনো কোনো আমলকে অন্যান্য আমলের তুলনায় অধিক মহব্বত করেন। কারণ, তার ফায়দা ও প্রভাব অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং তা জনকল্যাণমুখী হয়ে থাকে। যেমন, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া, দান খায়রাত করা ইত্যাদি।
এ বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেন, মহামান্য দুই ইমাম; শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এবং তার ছাত্র আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ.। তারা বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইব্ন তাইমিয়্যাহ র. মাজমু‘ ফাতওয়ায় [২২/৩০৮] উল্লেখ করেন, “অনেক আলেম বলেন, হাদিস লিপিবদ্ধ করা, নফল সালাত হতে উত্তম। আবার কোন কোন শেখ বলেন, রাতের অন্ধকারে যখন কেউ দেখে না, তখন দুই রাকাত সালাত আদায় করা, একশ হাদিস লিপিবদ্ধ করা হতে উত্তম। অপর একজন ইমাম বলেন, বরং উত্তম হল, এ কাজ করা ও কাজ করা। মানুষের অবস্থার ভিন্নতার কারণে আমলসমূহের উত্তম হওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, একই আমল কখনো সেটি উত্তম হয়, আবার কখনো তা উত্তম হয় না অথবা তা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। যেমন, সালাত: সালাত আদায় করা কুরআন তিলাওয়াত হতে উত্তম। আর কুরআন তিলাওয়াত যিকির করা হতে উত্তম, আর যিকির করা, দু‘আ করা হতে উত্তম। তারপর নিষিদ্ধ সময়ে সালাত আদায় করা, যেমন ফজরের সালাতের পর, আসরের সালাতের পর এবং জুমার খুতবার সময় সালাত আদায় করা হারাম। তখন কুরআন তিলাওয়াত করা, অথবা যিকির করা অথবা দু’আ করা অথবা (খুতবা) মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা সালাতের থেকে উত্তম”।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ‘মাদারে-জুস সালেকীন’ গ্রন্থে ইবাদতে এই দূরবর্তী ফিকহ সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে আমরা তা বর্ণনা করছি। তিনি বলেন,‘মনে রাখবে, সর্বাবস্থায় এবং সব জায়গায় উত্তম হল, ঐ অবস্থা ও সময়ের মধ্যে কোন কাজটি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহব্বত অর্জন করা যায়, তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং ঐ সময়ের দাবি ও চাহিদা অনুযায়ী সে আমল করা যে আমলে আল্লাহ্ তা‘আলা রাজি-খুশি ও সন্তুষ্ট হন।
আর এরাই হল, প্রকৃত ইবাদতকারী। এর পূর্বে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন, বিশেষ প্রকৃতির ইবাদতকারী। তাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন কোনো ধরনের ইবাদত, যার সাথে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে, যখন সে তা থেকে নিজেকে পৃথক করে তখন সে মনে করতে থাকে যে, তার ইবাদতে ঘাটতে হয়েছে ও সে ইবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে এ লোকটির আল্লাহর ইবাদত একপেশে পদ্ধতিতে হয়। পক্ষান্তরে যে প্রকৃত ইবাদতকারী তার ইবাদত কোনো কিছুকে অন্য কিছুর উপর প্রাধান্য দেওয়ার মত সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। বরং তার উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসন্ধান করা; তা যেখানেই পাওয়া যাক না কেন। ফলে তার ইবাদতের ভিত্তি হল, সব সময় দাসত্বের বিভিন্ন স্তরে স্থানান্তরিত হতে থাকা। যখনই তার জন্য কোনো একটি ইবাদতের স্থান উদয় হয়, তখন সে তার পিছনে ছুটতে থাকবে এবং তা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, যতক্ষণ না তার জন্য অপর একটি ইবাদতের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এ হল, তার চলার পথের পদ্ধতি; এ ভাবেই শেষ হতে থাকে তার গতি। তুমি যখন আলেমদের দেখবে তখন, তাকেও আলেমদের সাথে দেখতে পাবে। আবার যখন তুমি আবেদদের দেখবে, তাকেও তাদের সাথে দেখবে। অনুরূপভাবে যখন তুমি মুজাহিদদের দেখবে, তাকেও তাদের সাথে দেখবে। আর যখন তুমি যিকিরকারীদের দেখবে, তখন তুমি তাকেও যিকিরকারীদের সাথে দেখবে। আর যখন তুমি মুহসিনদের দেখবে, তখন তুমি তাকেও তাদের সাথে দেখবে। এরা হল, প্রকৃত ইবাদতকারী যারা কোনো নির্ধারিত ধরা-বাঁধা নিয়ম নয়, আর যারা কোনো শর্তের বন্ধনেও আবদ্ধ নয়।’
আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল কোনটি তার আলোচনা শুরু করার পূর্বে আমাদের জন্য জরুরি হল, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা, যার উপর নেক আমল কবুল হওয়া না হওয়া, সাওয়াব লাভ করা না করা এবং আখিরাতের আমলের দ্বারা উপকার লাভ করা না করা ইত্যাদি জরুরি বিষয়সমূহ নির্ভর করে। আর তা হল:-
এক: সমস্ত আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা। অর্থাৎ আমল করা দ্বারা উদ্দেশ্য হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাকে রাজি-খুশি করা, আল্লাহ নিকট বান্দার জন্য যে সব নেয়ামত ও বিনিময় রয়েছে, তার আশা করা। আর অন্তরকে মানুষের দৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ খালি করা এবং দুনিয়াতে মানুষ থেকে কি লাভ করবে তার প্রতি কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ না করা। আর অন্তর দ্রুততম যে ফলের আশা করতে থাকে তা থেকেও মুক্ত করা।
দুই: ইবাদতে নিয়তের পার্থক্য করা। অনেকে মনে করে, এ শর্ত এবং ইখলাস একই কথা। কিন্তু বাস্তবতা হল, দুটি এক নয়, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ‘ইবাদতে নিয়ত করা ইখলাস থেকে আরও একটি বর্ধিত ও অতিরিক্ত বিষয়। কারণ, ইবাদতে ইখলাস হল, অন্যকে বাদ দিয়ে কেবল মা‘বুদেরই ইবাদত করা। আর ইবাদতের নিয়তের দুটি স্তর আছে:
এক ইবাদতকে অপর ইবাদত থেকে পার্থক্য করা।
তিন: ইবাদতে যত্নবান হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা যেভাবে ইবাদত করাকে পছন্দ করেন এবং বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, সেভাবে ইবাদতকে বাস্তবায়ন ও আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ শর্তের দাবি হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত ও তার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার অনুকরণ-অনুসরণ করা।
চার: নেক আমলসমূহের সাওয়াবের হেফাজত ও সংরক্ষণ করা। আর তা হল, আমলকে নষ্ট বা বরবাদ করার কারণ হয়, এমন সব বিষয় হতে বিরত ও সতর্ক থাকা। যেমন, রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য আমল করা, মানুষকে খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়া, আত্মতৃপ্তিতে ভোগা, গণক ও জাদুকরদের নিকট যাওয়া, ইত্যাদি কর্মকাণ্ড।
অনুরূপভাবে একজন আমলকারীকে অবশ্যই এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকবে, যেগুলো নিজের আমলের সাওয়াব অন্যের নিকট চলে যাওয়ার কারণ হয়। এটি অনেক সময় দুনিয়াতে কারো উপর জুলুম করার কারণে হয়ে থাকে অথবা কারো হক নষ্ট করা বা কোনো ধরনের কষ্ট দেয়ার কারণে হয়ে থাকে। যেমন, গীবত করা, গালি দেয়া, চুরি করা, মুমিন ভাইকে পরিত্যাগ করা- যে পরিত্যাগ শরী‘আতে নিষিদ্ধ, ইত্যাদি।
আমরা এখন আল্লাহর নিকট প্রিয় আমলসমূহের বর্ণনা করব। সে গুলো হল নিম্নরূপ:
এক: আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা: যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।” [2]
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ: তাওহীদের প্রতি ঈমান আনা। অর্থাৎ যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা। আর তা সংঘটিত হবে, অন্তরের আমলসমূহ কেবল আল্লাহর জন্য করা। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল অন্তরের আমলসমূহের অনুসারী। কারণ, ঈমান অনেকগুলো শাখা প্রশাখা ও অসংখ্য আমলের নাম। তার মধ্যে কিছু আছে অন্তরের আমল, আবার কিছু আছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। আর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হল, অন্তরের আমল। কারণ, অন্তরের আমল সব সময় এবং সর্বাবস্থায় প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য আবশ্যকীয়। যখন কোনো বান্দা থেকে অন্তরের আমল দূর হয়ে যায়, তখন তার ঈমানও দূর হয়ে যায়। যেমনিভাবে ঈমানের বাহ্যিক আমলসমূহ অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল, তা বিশুদ্ধ হওয়া ও গ্রহণযোগ্য হওয়া নির্ভর করে অন্তরের ঈমানের উপর; যা মূল বলে স্বীকৃত। এ কারণেই আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ‘বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ’ কিতাবে লিখেন:
‘সুতরাং অন্তরের বিধান কি তা জানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিধান জানা হতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটিই হচ্ছে আসল, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিধি-বিধান এর শাখা-প্রশাখা’।
একজন মুমিনের নিকট দ্বীনের আসল মূলকথা ও মূল ভিত্তি হচ্ছে যে সে তার অন্তরের আমল থেকে শুরু করবে, যার সূচনা হবে ইলমের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা ও তার রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সংবাদের উপর, যা থেকে অন্তরের সকল আমলের ফলাফল লাভ হয়। যেমন, আল্লাহর প্রতি দৃঢ়-বিশ্বাস, দ্বীন বা আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা, আল্লাহর জন্য মহব্বত করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, আল্লাহর শর‘ঈ ও কাদরী ফায়সালার উপর ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর নিকট আশা করা, আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও দুশমনি করা, আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া, আল্লাহর জন্য অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়া, আল্লাহর ফায়সালায় প্রশান্তি লাভ করা ইত্যাদি বহু আমলকে আবশ্যক করে।
ঈমানের প্রকাশ্য ও গোপন আমলসমূহ পালন করার পদ্ধতি ও পরিমানের দিক বিবেচনায় মানুষেরও মর্যাদা ও শ্রেণীর বিভিন্নতা হয়ে থাকে; [সবাই এক পর্যায়ের বা এক স্তরের হয় না।] তাদের মধ্যে কতক মানুষ আছে, যারা তাদের নিজেদের উপর জুলুমকারী। আবার কতক আছে, মধ্যপন্থী, আবার কতক আছে, যারা ভালো কাজে অগ্রসর। এ তিনটি স্তরের মানুষের মধ্যে প্রতি স্তরের মানুষের আরও অসংখ্য শ্রেণী বিন্যাস আছে, যা আয়ত্ত করা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লামা ইবনে রজব রহ. «ألا وإن في الجسد مضغة .. الحديثَ» “মনে রাখবে দেহের মধ্যে একটি গোস্তের টুকরা আছে” এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘এখানে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পাদিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সঠিক হওয়া, হারাম থেকে বিরত থাকা এবং সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা, ইত্যাদি সবই বান্দার অন্তরের কর্মকাণ্ডের পরিশুদ্ধতা অনুযায়ীই হয়ে থাকে। যখন অন্তর হবে নিরাপদ, তার মধ্যে আল্লাহর মহব্বত এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যা মহব্বত করে, তার প্রতি মহব্বত করা ছাড়া আর কোন কিছুর মহব্বত তার অন্তরে স্থান পাবে না বা থাকবে না এবং একমাত্র আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করে তাতে পতিত হওয়ার ভয় ছাড়া, আর কোন ভয় তার অন্তরে থাকবে না, তখন তার সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ঠিক হয়ে যাবে। তখন বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কোনো নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত হবে না এবং সন্দেহ, সংশয়যুক্ত বিষয়সমূহ থেকে হারামে পতিত হওয়ার আশঙ্কায় বেঁচে থাকবে। ’
এখানে একটি প্রশ্ন যুক্তিসংগত, তা হচ্ছে, ঈমান কেন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল?
উত্তর: কারণ, ঈমানের বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন বান্দা সমস্ত মাখলুকাত থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। বান্দার অন্তর আল্লাহ ছাড়া সব কিছুকে বাদ দিয়ে একমাত্র এক আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। আর এটিই হল, ইবাদতের হাকীকত ও মর্মার্থ; যার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষ ও জ্বীন সৃষ্টি করেছেন, কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, অসংখ্য নবী ও রাসূলকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং সাওয়াব ও শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. মাজমু‘ ফাতাওয়ায় বলেন,‘‘মানুষের অন্তর কখনোই সমস্ত মাখলুকাত হতে অমুখাপেক্ষী হবে না, কিন্তু তখন হবে, যখন আল্লাহই হবে তার এমন অভিভাবক যার ইবাদত ছাড়া আর কারো ইবাদত সে করে না, তার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে সে সাহায্য চায় না, তার উপর ভরসা করা ছাড়া আর কারো উপর সে ভরসা করে না, আর একমাত্র আল্লাহ যে সব কিছুকে পছন্দ করেন তা ছাড়া অন্য কোন কিছুতে সে খুশি হয় না এবং যে সব কিছুতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তা ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে স সন্তুষ্ট হয় না। আর আল্লাহ যে সবকে অপছন্দ ও ঘৃণা করেন, সে সব কিছুকে সে অপছন্দ ও ঘৃণা করে। আল্লাহ যাদের সাথে দুশমনি রাখেন তাদের ছাড়া আর কারো সাথে দুশমনি রাখে না। আল্লাহ যাদের সাথে বন্ধুত্ব করেন, তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করে। তাদের ছাড়া আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করে না। কাউকে বাধা দিতে বা বারণ করতে হলে, আল্লাহর জন্যই বাধা দেয় ও বারণ করে। সুতরাং যখনই একজন বান্দার দ্বীনে আল্লাহর জন্য শক্তিশালী ইখলাস থাকবে, তখনই তার দাসত্ব পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং সৃষ্টিকুল থেকে সে অমুখাপেক্ষী হবে। আর আল্লাহর জন্য দাসত্ব পরিপূর্ণতা লাভ করলেই তা বান্দাকে শিরক ও কুফর থেকে বাঁচাতে পারবে।”
এ কারণেই ঈমান, সর্বোত্তম ও সর্বাধিক প্রিয় আমল। আর এ ছাড়া যত আমল আছে, সব আমল আল্লাহর নিকট ফজিলতের দিক দিয়ে ঈমানের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের।
দুই: আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আত্মীয়তা সম্পর্ক অটুট রাখা: প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখা।” [3]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা মাখলুককে সৃষ্টি করেন। মাখলুককে সৃষ্টি করার কাজ সম্পন্ন করার পর আত্মীয়তার-সম্পর্ক বলল, এ (আল্লাহর কাছে) হল, আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি কি খুশি হবে না, আমি সম্পর্ক রাখি যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখে এবং আমি সম্পর্ক কর্তন করি যে তোমার সাথে সম্পর্ক কর্তন করে। সে বলল, হ্যাঁ হে রব! তিনি বললেন, তোমাকে তা দেয়া হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি চাও তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর– “তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টি সমূহকে অন্ধ করেন।” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২২, ২৩] [4]
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট কারীকে অভিশাপ করেন।” [5]
আলেমগণ বলেন, ‘আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষার মূল কথা হচ্ছে, মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা’। আল্লামা কুরতবী রহ. বলেন, ‘রাহেম বা সম্পর্ক বজায় রাখা’ এর-সম্পর্ক দু ধরনের হয়ে থাকে। এক-সাধারণ সম্পর্ক, দুই-বিশেষ সম্পর্ক”।
সাধারণ সম্পর্ক: ব্যাপক ও বিস্তৃত: আর এটি হল, দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সাথে ঈমানী বন্ধনের কারণে, তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখা, ঈমানদারদের মহব্বত করা, তাদের সহযোগিতা করা, তাদের কল্যাণে কাজ করা, তাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা, তাদের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তাদের লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের হকগুলো আদায় করা। যেমন, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া, তাদের হক সমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা, তাদের গোসল দেওয়া, তাদের উপর জানাযার সালাত আদায় করা, দাফন-কাফন ইত্যাদিতে শরিক হওয়া।
বিশেষ সম্পর্ক: আর তা হল, মাতা-পিতা উভয় দিক থেকে নিকটাত্মীয়তার-সম্পর্ক রক্ষা করা। সুতরাং তাদের হক্কসমূহ, তাদের বিশেষ অধিকারসমূহ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব আদায় করা সন্তানের উপর ওয়াজিব। যেমন, মাতা-পিতার খরচ বহন করা, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, প্রয়োজনের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো থেকে বেখবর না থাকা ইত্যাদি। আর যখন বহু আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়, তখন যেটি নিকট হওয়ার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবে সেটি, তারপর যেটি তুলনামূলক কাছে সেটি প্রদান করবে।
আল্লামা ইবনু আবি জামরাহ্ বলেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল বা ধন-সম্পদ দ্বারা হয়, প্রয়োজনের সময় সাহায্য করা দ্বারা হয়, ক্ষতিকে প্রতিহত করা দ্বারা হয়, মানুষের সাথে হাসি-খুশি ব্যবহার দ্বারা হয়, দো‘আ করা দ্বারা হয়, সাধ্য অনুযায়ী কারও কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারা হয়, সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে ক্ষতি হতে বাঁচানো দ্বারা এবং তাদের উপকার করা দ্বারা হয়। আর আত্মীয়তার-সম্পর্ক বজায় রাখা তখন কর্তব্য হয়, যখন আত্মীয়গণ ঈমানদার হয়ে থাকে। আর যদি ঈমানদার না হয়ে কাফের অথবা ফাজের হয়, তখন আল্লাহ্র সন্তুষ্টির তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হল সম্পর্ক বজায় রাখা। তবে শর্ত হল, তাদের নসিহত করতে হবে ও জানাতে হবে, তারা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনে এবং এ অবস্থার উপর অটল থাকে, তাহলে তারা সত্য থেকে অনেক দূরে সরে যাবে এবং তাদের পিছনে পড়ে থাকতে হবে। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে তারা যাতে, ঈমান গ্রহণ করে তার জন্য দোয়া করা দ্বারা তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা যায়”।
তিন: আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল হচ্ছে, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা: প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তারপর আত্মীয়-সম্পর্ক বজায় রাখা, তারপর ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা।” [6]
মা‘রুফ: সমস্ত ভালো কাজ ও ইবাদতকে মারুফ বলা হয়ে থাকে। ভালো কাজকে মারূফ (জানা বিষয়) এ জন্য বলা হয়, কারণ, একজন জ্ঞানী লোক বা সঠিক প্রকৃতির অধিকারী লোক বলতেই এটি জানে। আর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মারূফ হল, একমাত্র আল্লাহ যার কোনো শরিক নাই তাঁর ইবাদত করা, ইবাদতকে শুধু তাঁর জন্যই একনিষ্ঠ করা এবং ইবাদতে তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করা। তারপর যত ইবাদত বন্দেগী আছে যেমন-ফরয, ওয়াজিব, নফল ইত্যাদি সবই সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত।
মুনকার [অগ্রহণযোগ্য কাজ]: যে সব কাজ থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, সবই হল, মুনকার। সুতরাং সব ধরনের গুনাহ, তা কবীরা হোক বা সগীরা সবই মুনকার। কারণ, বিশুদ্ধ বিবেক ও সঠিক প্রকৃতি এগুলোকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে। আর সবচেয়ে বড় মুনকার বা অন্যায় হল, আল্লাহর সাথে শরীক করা।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা মুমিন ও মুনাফেকদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়, এটি মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার তিনটি স্তর আছে, যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখে, তাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা করা সম্ভব না হয়, মুখের দ্বারা প্রতিহত করবে, আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তা হলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটি হল, ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।” [7]
অনুরূপভাবে তিনটি গুণ আছে, একজন ভালো কাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজের নিষেধকারীর মধ্যে এ তিনটি গুণ থাকা অতীব জরুরি।
১) ইলম: যে ভালো কাজটির আদেশ দেবে সে সম্পর্কে তাকে অবশ্যই জানতে হবে এবং যে খারাপ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে, তার সম্পর্কেও তার সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
২) কোমলতা: যে কাজের আদেশ দেবে এবং যে কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে, সে বিষয়ে তাকে অবশ্যই কোমল হতে হবে।
৩) ধৈর্য: জুলুম নির্যাতনের উপর ধৈর্যশীল হতে হবে। যেমন, লোকমান হাকিম তার ছেলেকে যে অসিয়ত করেন আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন, যাতে মানুষ তার অনুকরণ করে এবং তা তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “হে আমার প্রিয় বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এ গুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।”
সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার পূর্বে ইলম থাকতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার সময় কোমল হতে হবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার পর ধৈর্য ধরতে হবে।
চার: আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হচ্ছে, ফরযসমূহ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বীয় রবের পক্ষ হতে বর্ণনা করে বলেন, “যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে দুশমনি করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দার উপর আমি যা ফরয করেছি, তা আদায় করার মাধ্যমে আমার বান্দা যতটুকু আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে, আর কোন কিছু দ্বারা সে তা করতে পারে না”। [বুখারি]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «من عادى لي وليًا» এতে আল্লাহর অলি দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যারা আল্লাহ সম্পর্কে জানে, আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে অটুট ও অবিচল এবং আল্লাহর ইবাদতে একনিষ্ঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «مما افترضته عليه» দ্বারা উদ্দেশ্য ফরযসমূহ। ফরযে আইন বা ফরযে কিফায়া ও প্রকাশ্য ফরযসমূহ সবই এর অন্তর্ভুক্ত। তন্মধ্যে: কর্মগত ফরযসমূহ যেমন, ওযু, সালাত, যাকাত, সদকায়ে ফিতর, রোযা, ইহরাম, হজ, আল্লাহর রাহে জিহাদ ইত্যাদি।
তাযকীয়া (আন্তরিক পবিত্রতা): যেমন, যেনা-ব্যভিচার, হত্যা, মদ্যপান, সুদ-ঘোষ, শূকরের গোস্ত খাওয়া, ইত্যাদি হারামসমূহ। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীল কর্মসমূহ।
তাছাড়া অপ্রকাশ্য ফরযসমূহ: যেমন আল্লাহ সম্পর্কে জানা, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে ভয় করা।
আর আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে অধিক শক্তিশালী মাধ্যম হল, ফরযসমূহ আদায় করা। আর ফরযসমূহকে যেভাবে আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেভাবে আদায় করার মাধ্যমে মূলত যিনি ফরযসমূহ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, তার সম্মান, তা‘যীম ও তার পরিপূর্ণ আনুগত্য, আর রবুবিয়্যাতের বড়ত্ব এবং দাসত্বের হীনতা প্রকাশ পায়। সুতরাং ফরযসমূহ আদায় করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মহান আমল।
সবচেয়ে পছন্দনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফরয হচ্ছে, ওয়াক্ত মত সালাত আদায় করা। “আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, সময়মত সালাত আদায় করা।” [8]
আল্লামা ইব্ন বাত্তাল রহ. বলেন, সালাতকে সালাতের প্রথম সময়ের মধ্যে আরম্ভ করা, দেরিতে আরম্ভ করা হতে অধিক উত্তম। কারণ, সালাত প্রিয় আমল হওয়ার জন্য সালাতকে মোস্তাহাব সময়ের মধ্যে আদায় করা শর্ত করা হয়েছে। ইমাম তাবারী রহ. বলেন, “যে ব্যক্তি সালাতসমূহ নির্ধারিত সময়ে আদায় করার কষ্ট কম হওয়া এবং সময়মত আদায় করার মহান ফযিলত সম্পর্কে জানা থাকা স্বত্বেও কোনো প্রকার ওযর ছাড়া ফরয সালাতসমূহকে নির্ধারিত সময়ে আদায় করে না, সে অন্যান্য দায়িত্ব সম্পর্কে আরও বেশি উদাসীন”।
সুতরাং সালাতকে সালাতের ওয়াক্তের বাইরে আদায় করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনে এ বিষয়ে বলেন, “অতএব সেই সালাত আদায়কারীর জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী।” [সূরা মাউন, আয়াত: ৪, ৫]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী: لِّلۡمُصَلِّينَ অর্থাৎ ‘সালাত আদায়কারী’ দ্বারা উদ্দেশ্য, যারা সালাত আদায়করার যোগ্য, আর তারা সালাত আদায় করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারপর তারা তাদের নিজেদের সালাত আদায় করা হতে অমনোযোগী। এই ‘অমনোযাগী’ কয়েকভাবে হতে পারে। এক- তারা একেবারে সালাত আদায় করা হতে গাফেল বা অমনোযোগী। দুই- তারা শরী‘আত নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা হতে অমনোযোগী। ফলে তারা এক ওয়াক্তের সালাতকে অন্য ওয়াক্তের মধ্যে নিয়ে আদায় করে। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা সালাতকে নির্ধারিত সময় থেকে দেরীতে আদায় করে। আবুল আলীয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তারা সালাতকে নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করে না এবং সালাতের রুকু ও সেজদা ভালোভাবে আদায় করে না”।
সুতরাং﴿عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ﴾ [الماعون: ٥] “যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী”। [সূরা মাউন, আয়াত: ৪, ৫] এর এক অর্থ, তারা প্রথম সময়ে সালাত আদায় করা থেকে অমনোযোগী। ফলে সে সব সময় অথবা অধিকাংশ সময় সালাতকে দেরীতে আদায় করে। অপর অর্থ, সে সালাতকে যেভাবে সালাতের আরকান ও শর্তসমূহ সহকারে আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেভাবে আদায় করা থেকে অমনোযোগী। অন্য অর্থ হচ্ছে, সে সালাতে একাগ্রতা এবং সালাতের অর্থ ও গুঢ় কথা সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করা থেকে অমনস্ক ও অমনোযোগী।
পাঁচ: আল্লাহ্ তা‘আলা বে-জোড়কে অধিক পছন্দ করেন প্রমাণ: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা বেজোড়; তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।” [মুসলিম] [9]
وتر শব্দের অর্থ একা, আর আল্লাহর গুণ হওয়ার ক্ষেত্রে وتر শব্দের অর্থ, আল্লাহ একক, যার কোনো শরিক নেই ও কোনো দৃষ্টান্ত নাই; তিনি তার সত্ত্বায় একক; সুতরাং তার অনুরূপ কিছু নেই, নেই কোনো সদৃশ। তিনি তার সিফাত সমূহে একক; তার কোনো সাদৃশ্য নেই; নেই কোনো প্রতিমূর্ত্তি। তিনি তার কর্মে একক; তার কর্মে কোনো শরিক নেই। আর নেই কোনো সহযোগী।
আবার কেউ কেউ বলেন, «يحب الوتر» -আল্লাহ্ তা‘আলা বে-জোড়কে পছন্দ করেন- এ কথার অর্থ হল, আল্লাহর দরবারে অধিকাংশ ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রে বে-জোড় আমল ও ইবাদতের ফযিলত বেশি। [ফলে তিনি অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বে-জোড় নির্ধারণ করেছেন।] যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারণ করেছেন। তাহারাতকে তিনবার করে করা, তাওয়াফ সাতবার, সাঈ সাতবার, পাথর নিক্ষেপ সাতবার, আইয়ামে তাশরিক তিনদিন, ঢিলা-কুলুখ দিয়ে পবিত্রতা হাসিল তিনবার ইত্যাদি। অনুরূপভাবে কাফনসমূহ তিন কাপড়। এছাড়াও আল্লাহ্ তা‘আলা তার অধিকাংশ বড় বড় মাখলুককে বেজোড় সৃষ্টি করেছেন। যেমন, আসমান সাতটি, জমিন সাতটি, সমুদ্র সাতটি, দিন সাতটি ইত্যাদি।
আবার কেউ কেউ বলেন, এ কথার অর্থ ঐ বান্দার গুণের সাথে সম্পৃক্ত যে আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহকে একক ও একা জেনে এবং আল্লাহকে এক জেনে খালেস করে তাঁর জন্য। আবার কেউ কেউ বলেন, এর উপর সাওয়াব দেন এবং বে-জোড় আমলকারীর আমল কবুল করেন। কাজী রহ. বলেন, যে কোনো বস্তু আল্লাহর সাথে সামান্য হলেও মুনাসেবত-সম্পর্ক- রাখে তা আল্লাহর নিকট অন্যান্য বস্তুসমূহ থেকে অধিক পছন্দনীয়, যার মধ্যে এ সম্পর্ক থাকে না। আবার কেউ কেউ এখানে হাদিসটিকে وتر এর সালাত সম্পর্কে বলা হয়েছে বলে দাবি করেন; তাদের প্রমাণ হল, এ হাদিস যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ বে-জোড় তিনি বে-জোড়কে পছন্দ করেন, হে কুরআনের অনুসারী, কুরআন তোমরা ভিত্র (বিতির সালাত) আদায় কর।” [10]
তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেন। কিন্তু হাদিসটিকে শুধু এ অর্থের উপরই প্রয়োগ করার জন্য খাস বা নির্দিষ্ট করা জরুরি নয়। বরং হাদিসের অর্থটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করাই সুস্পষ্ট।
ছয়: আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম আমল- মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। প্রমাণ: “আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, “সময় মত সালাত আদায় করা” তারপর আমি বললাম, তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, “তারপর মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা।” [বর্ণনায় বুখারি] [11]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দেন, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদত সালাতের পর আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল- মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে «ثم» শব্দ যা ধারাবাহিকতা বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে তা ব্যবহার করে কোন আমলের পর কোন আমল উত্তম তা বর্ণনা করে দিয়েছেন। মাতা-পিতার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: “আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” [সূরা ইসরা, আয়াত: ২৩, ২৪]
আল্লাহ রাব্বুল আলমীন আরও বলেন, “সুতরাং, আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান, আয়াত:১৪]
অর্থাৎ আমরা তাকে বললাম, أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡك ‘আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর’ আয়াতের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, ‘আল্লাহর জন্য শুকরিয়া ঈমানের নেয়ামতের কারণে, আর মাতা-পিতার শুকরিয়া তার লালন-পালনের কারণে’।
আলেমগণ বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পরে কৃতজ্ঞতা ও সদ্ব্যবহার (ইহসান ও শুকর) ভালো কাজের সম্পৃক্ততা, আনুগত্য ও মান্যতা পাওয়ার সব চেয়ে উপযুক্ত মাখলুক হল, মাতা-পিতা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদত, আনুগত্য ও শুকরিয়া আদায়ের সাথে যাদের সম্পৃক্ত করেন, তারা হলেন, মাতা-পিতা। মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাদের সাথে সম্মানের সাথে উত্তম কথার মাধ্যমে তাদের মুখোমুখি হওয়া; আর সেটি হবে তখনই যখন তা হবে সব রকমের দোষ-ত্রুটিমুক্ত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, আবারো লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, আবারো লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মাতা-পিতা অথবা তাদের যে কোনো একজনকে জীবিত পেল অথচ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।” [12]
সৌভাগ্যবান ব্যক্তি: যে মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, যাতে তাদের মারা যাওয়ার কারণে এ সুযোগ তাদের হাতছাড়া না হয়। অন্যথায় তাদের মারা যাওয়ার কারণে, সে পরবর্তীতে লজ্জিত হবে।
হতভাগা লোক: যে তার মাতা-পিতার নাফরমানি করে। বিশেষ করে, যার নিকট মাতা-পিতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ পৌঁছেছে।
মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয় হচ্ছে: তাদের কোনো প্রকার ধমক না দেওয়া, বরং তাদেরকে সব সময় সুন্দর কথা ও বিনম্র ব্যবহার দ্বারা সম্বোধন করবে। যেমন তাদের এ বলে ডাকবে, হে আমার পিতা, হে আমার মাতা। পিতা-মাতাকে তাদের নাম ধরে বা তাদের উপনাম ধরে ডাকবে না। তাদের প্রতি দয়া পরবশ হবে, দাস যেমন তার মনিবের সামনে নমনীয় থাকে তেমনি মাতা-পিতার সামনে তার সন্তানরাও নমনীয় থাকবে। তাদের প্রতি রহমতের দো‘আ করবে। তাদের জন্য দো‘আ করবে। মাতা-পিতা সন্তানের প্রতি যেভাবে দয়া করেছিল, তারা তাদের মাতা-পিতার প্রতি অনুরূপ দয়া করবে। ছোট বেলা মাতা-পিতা তাদের প্রতি যেভাবে দয়া করেছে তারা তাদের মাতা-পিতার প্রতি অনুরূপ দয়া করবে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার ও তাদের আনুগত্য করা যেন কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণ না হয় এবং আল্লাহর ফরযসমূহ ছুটে যাওয়ার কারণ না হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।