নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য উঠে আসছে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
র্যাব জানায়, রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ২টি প্লট আছে।
এছাড়াও তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারীত্বে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে পাপিয়ার। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে তার। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক এ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব আরও জানায়, পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন নরসিংদীতে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। ই পর্যন্ত পুলিশের এসআই ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা তারা আদায় করেছে বলে তথ্য মিলেছে। এছাড়া ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে পাপিয়া তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
রোববার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, পাপিয়ার আয়ের অরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। তারা ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সের মেয়েদের অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করে। যাদের অধিকাংশকেই নরসিংদী থেকে চাকরি দেওয়ার কথা এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এদিকে রোববার ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল রুমের পাপিয়ার আস্তানা ও ফার্মগেট এলাকার ২৮ নং ইন্দিরা রোডস্থ ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’ নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। এতে ১ টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা ও ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ তারকা হোটেল থেকে চার নারীকে আটক করা হয়। যাদের দীর্ঘদিন মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অসামাজিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।