পাশাপাশি দুটি কক্ষ। একটি কক্ষে শিশুটিকে নিয়ে একই বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন শিশুটির মা ও নানি। আরেক কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন শিশুটির বাবা ও মামা। শিশু থাকায় ওই কক্ষে রাতভর জ্বালানো ছিল আলো। অন্যকক্ষে বাতি ছিল নেভানো। রাতে শিশুটির থাকা কক্ষে বড় মশারি টানানো ছিল। সর্বশেষ ভোর ৪টার দিকে দুধ খাওয়ানো হয় শিশুটিকে। সকাল ৬টার দিকেই বিছানায় সেই শিশু আবদুল্লাহ আল মাহাদী নেই বলে চিৎকার শুরু করেন শিশুর মা ও নানি। এর কয়েক মিনিট পরই শিশুটির নানা কক্ষের বাইরে বারান্দায় গোসলখানায় বালতির ভেতর পানির মধ্যে শিশুটির লাশ খুঁজে পান।
কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিনিধির কাছে ওই রাতের চিত্র তুলে ধরেন শিশুটির মা ও নানা-নানি। পুলিশের কাছেও একই বর্ণনা দেন তাঁরা। পুলিশ বলছে, তাঁদের বর্ণনায় ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। ওই সময়ই শিশুর বাবা পাশের কক্ষ থেকে এসে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে যান শিশুটিকে। এরপর বাইরে বেরিয়ে গোসলখানায় বালতির পানিতে চুবিয়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, পাশের কক্ষ থেকে এসে মশারি তুলে মা ও নানির মধ্য থেকে শিশুটিকে কাঁথায় জড়িয়ে তুলে নেওয়ার সময় তাঁদের টের পাওয়ার কথা ছিল। তা ছাড়া ভোর ৪টায় দুধ খাওয়ানোর পর বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ার কথা নয়। ফলে অন্যদের ঘিরেও সন্দেহটা দানা বাঁধছে।
এদিকে গ্রেপ্তার থাকা শিশুর বাবা বিজয় হাসান ফকিরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে করা পুলিশের সাত দিনের রিমান্ড শুনানি হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। হত্যার ঘটনায় শিশুটির মা, নানা-নানিকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে না জানিয়ে কোথাও না যেতেও গতকাল সন্ধ্যায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত রবিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাংনাহাটি গ্রামে ১৯ দিন বয়সী এক ছেলেশিশুর লাশ গোসলখানায় বালতির ভেতর পানি থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুর মা ও নানা-নানি অভিযোগ করেন, শিশুটিকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছেন শিশুটির বাবা। ঘটনার পর তাঁরা নিহত শিশুর বাবা বিজয় হাসান ফকিরকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় হাসান বারবারই বলেছেন, ‘আমি হত্যা করিনি। এটা ষড়যন্ত্র।’
সুরতহাল তৈরি করা শ্রীপুর মডেল থানার এসআই নাজমুল শাকিব বলেন, ‘শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নাকি চুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে; তা বোঝা যায়নি। তবে শিশুটির পেট ছিল কিছুটা ফাঁপা। সুরতহাল তৈরিকালে নাক দিয়ে তিন-চার ফোঁটা পানি ঝরলেও মুখের ভেতর থেকে পানি বের হয়নি।’
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকতার হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় শিশুটির মা ও নানা-নানিকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি পুলিশের একাধিক দল হত্যার ছায়া তদন্ত করছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।