জুমবাংলা ডেস্ক : বহুল আলোচিত পাটকল শ্রমিক জাহালমের পর এবার দুদকের ভুল তদন্তের শিকার নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী নিরপরাধ মো. কামরুল ইসলাম। শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির মামলায় ১৫ বছরের সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন ওই মো. কামরুল ইসলাম। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় হাইকোর্টের কাছে ভুল স্বীকার করেছে। এ অবস্থায় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানি ও রায়ের জন্য রেখেছেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে সরল বিশ্বাসে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে।
আর মো. কামরুল ইসলামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেছেন, আসামির নামের বানান ও ভুল ঠিকানা দেওয়ার শিকার হয়েছেন নোয়াখালীর পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের মো. কামরুল ইসলাম। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আসামির বাড়ি পশ্চিম রাজারামপুর। ভিকটিম মো. কামরুল ইসলামের ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কামরুল ইসলাম যে কলেজে ভর্তি হয়, সেখানে তার ছবি ছিল। ঠিকানা পশ্চিম রাজারামপুর লেখা ছিল। এরপরও দুদকের কর্মকর্তারা ভুল ঠিকানা ব্যবহার করে। একারণে তিনি রিট আবেদন করেছেন।
জানা যায়, এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে নোয়াখালীর মাইজদি পাবলিক কলেজে ভর্তির অভিযোগে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম ২০০৩ সালের ২৭ জানুয়ারি কুমিল্লায় মামলা করেন। কামরুল ইসলামের এসএসসি সনদে গ্রামের নাম পশ্চিম রাজারামপুর, পিতা আবুল খায়ের থাকলেও মামলার বাদী দুদকের পরিদর্শক ঠিকানা বদলে পূর্ব রাজারামপুর লিখে দেন। একইসঙ্গে পিতার নামের আগে ‘মো.’ বাদ দেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর যে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তাতেও এফআইআর অনুযায়ী আসামির নাম-ঠিকানা লেখা হয়। এই মামলায় বিচার শেষে নোয়াখালীর আদালত ২০১৪ সালের রায় দেন। রায়ে তিনটি ধারায় ৫ বছর করে মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে। এরপর আসামির বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই আদেশ পেয়ে নোয়াখালীর পুলিশ আসামিকে ধরতে গেলে বিষয়টি সামনে আসে। এরপর নির্দোষ কামরুল ইসলাম আইজীবীর শরনাপন্ন হন। পুরো বিষয়টি জেনে গতবছর হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গতবছর ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ভুল স্বীকার করে আদালতে প্রতিবেদন দেন। সেখানে এফআইআর ও অভিযোগপত্রে ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করা হয়। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে দুদকের আইনজীবী।
জানা যায়, প্রকৃত আসামির জন্ম ১৯৭৭ সালে। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন ১৯৯৮ সালে। তার বাড়ি নোয়াখালী সদরের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আবুল খায়ের, মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। আর নির্দোষ কামরুল ইসলামের জন্ম ১৯৯০ সালে। এসএসসি পাস করেন ২০০৬ সালে। তার বাড়ি পূর্ব রাজারামপুর গ্রামে। পিতার নাম মো. আবুল খায়ের। মায়ের নাম রওশন আরা বেগম।
কামরুল ইসলাম জানান, পিতার চাকরির সুবাদে ১৯৯৪ সালে নির্দোষ কামরুল ইসলাম সপরিবারে পৈত্রিক ঠিকানা ছেড়ে লক্ষ্মীপুরে চলে যান। ২০০৮ সালে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী হিসেবে চাকরি পান কামরুল। পরে ২০১৯ সালে ২৯ জানুয়ারি নোয়াখালীতে বদলি হন। তিনি সেখানেই কর্মরত। তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরে থাকার সময় নোয়াখালীর পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের ঠিকানায় দুই-একবার পুলিশ যাওয়ার খবর পেলেও সেটাকে তারা গুরুত্ব দেননি। তবে করোনা সংক্রমণের আগে গত বছরের শুরুতে পুলিশের তৎপরতা বেড়ে যায়। তখনই থানায় খোঁজ নিয়ে আদালতের সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর আইনজীবীর শরণাপন্ন হন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।