নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি আব্দুল আউয়ালের মেয়ে ঝুমা (৬)। অসহায় হতদরিদ্র পরিবারটির নিজেদের কোন জমি নেই, ঠাঁই মিলেছে সরকারী জমির উপর একটি কুঁড়ে ঘরে। তিন ছেলে ও এক মেয়ে ঝুমাকে রেখে মা মারা গেছে তিন বছর আগে। এর মধ্যে ঝুমার এক ভাই আবার প্রতিবন্ধি। বাবাও একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মায়ের শূন্যতায় পরিবারের একমাত্র এই মেয়ে শিশুর কাঁধে পড়েছিল সংসারের পাঁচ সদস্যের রান্নাসহ ঘর সামলানোর যাবতীয় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দিন পনের আগে আগুনে ঝলসে গুরুতর আহত হয় ঝুমা। কিন্তু আগুনে ঝলছে যাওয়া ছোট্ট এই শিশুটিচিকিৎসার ব্যবস্থা হয়ে উঠেনি আজও।
দিনদিন ক্ষতস্থান গুলো দগ্ধ ঘাঁয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে, ধরেছে পঁচনও। শিশুটির আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীদের মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলেও ঝুমার চিকিৎসায় সমাজের কোন দায়িত্বশীল এগিয়ে আসেননি।
ঝুমার স্বজনরা জানান, মায়ের শূণ্যতায় এই শিশুকেই রান্না করতে হতো। এতে মাঝে মধ্যে তার সাহায্যকারী হিসেবে থাকতো তার প্রতিবন্ধী বাবা। গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাবার সাথে রান্না করার সময় অসাবধানতাবশত শরীরে আগুন ধরে যায়। এতে ডান পা কোমর থেকে ঝলসে যায়। স্বজনরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তাবে অর্থের অভাবে তারা ঢাকায় না গিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন।
ঝুমার বাবা আব্দুল আউয়াল জানান, চিকিৎসকরা তার মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তাদের কাছে ঢাকা যাওয়া বা চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহের জন্য তার কাছে কোন অর্থ ছিল না। তাই ঝুমাকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসি। এখন প্রতিনিয়ত অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। অর্থের যোগানের ব্যবস্থা করতে না পারায় বাড়ীতে রেখেও চিকিৎসা দিতে পারছি না। চোখের সামনেই আমার মেয়ের কষ্ট ও যন্ত্রনা দেখতে হচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মইনুল হক খান জানান, এই শিশুটি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা চিকিৎসা না করে শিশুটিকে বাড়ীতে নিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন শিশুটি চিকিৎসা না পাওয়ায় তার যন্ত্রনা ও ঘাঁ থেকে পঁচনের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। জরুরী ভিক্তিতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় পা হারাতে হতে পারে শিশুটির।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, অর্থের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারা দুঃখজনক বিষয়। বিষয়টি কেউ তাকে এখনও অবহিত করেনি। তবে তিনি জরুরী ভিক্তিতে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।